প্রকাশ :
২৪খবর বিডি: 'দেশে নতুন নতুন আইন প্রণয়ন হলেও তার প্রয়োগে রয়েছে চরম বৈষম্য-জাতীয় সংসদ অধিবেশনে বিএনপি দলীয় সংসদ সদস্য হারুনুর রশীদের এমন মন্তব্যের পর আইনমন্ত্রী আনিসুল হক তার প্রতিবাদ জানিয়ে বলেছেন, বিএনপির শাসনামলেই আইনের শাসনের পথ রুদ্ধ হয়েছিল।'
তিনি দাবি করেন, আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে দেশে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।
বিএনপির সংসদ সদস্য হারুনের উদ্দেশে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, ‘জাতির পিতার হত্যার বিচার আটকাতে সংবিধানে ইনডেমিনিটি দেওয়া হয়েছিল। বিএনপি ক্ষমতায় থাকতে এই কুখ্যাত আইন বাতিল না করে আইনের শাসনের পথ রুদ্ধ করে দিয়েছিল।'
মঙ্গলবার সংসদের বৈঠকে বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের বিচারক (ছুটি, পেনশন ও বিশেষাধিকার) বিল-২০২২ উত্থাপনের সময় এই বির্তক হয়।
-আইনমন্ত্রী বিলটি উত্থাপণের অনুমতি চাইলে হারুন আপত্তি জানিয়ে বলেন, বিলের বিষয়ে কোনো আপত্তি নেই। বিচারপতিদের বেতনভাতা আরও বাড়ানো উচিত। বেশিসংখ্যক বিচারপতি নিয়োগ দেওয়া যেতে পারে। কিন্তু আইন করে, বিচারপতি বাড়িয়ে লাভ কি। আইনের যদি যথাযথ প্রয়োগ না হয়-
বিএনপির এই সংসদ সদস্য বলেন, সরকার আইনের প্রয়োগে বৈষম্য করছে। আইন থাকলেও তার যথাযথ প্রয়োগ নেই। আইন করে যথাযথ প্রয়োগ না পেলে আইন করে লাভ কী হবে?
তিনি বলেন, দেশে একটি বিচার নিষ্পত্তিতে ৩০ বছর লেগে যাচ্ছে। নিম্ন আদালত থেকে বিচারের পরে উচ্চ আদালতে ফাইনাল হতে বিচারপ্রার্থী মৃত্যুবরণ করছে।
বিরোধী দলের সারাদেশে কর্মসূচি পালনের অধিকার রয়েছে কিনা প্রশ্ন তুলে হারুন বলেন, আওয়ামী লীগ কর্মসূচি পালন করছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পাহারায়। কিন্তু বিরোধী দলকে কর্মসূচি পালন করতে দেওয়া হচ্ছে না। এখানে আইনের প্রয়োগের ক্ষেত্রে বৈষম্য করছেন কী না?
'সম্প্রতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগ-ছাত্রদলের সংঘর্ষের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, এটা কী সভ্য সুশাসনের রাষ্ট্র বলা যায়? সুপ্রিম কোর্টের অঙ্গণে ঢাবির ছাত্রী তন্বীকে ছাত্রলীগ নামধারী গুন্ডাপান্ডারা নিপীড়ন ও নির্যাতন করেছেন যা গণমাধ্যমে দেখানো হয়েছে। কিন্তু আইন এই ব্যাপারে এখনও কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি। আইন তৈরি করবেন কার জন্য? মানুষের জন্য আইন তৈরি করবেন। কিন্তু আইনের যথাযথ প্রয়োগ তো পাচ্ছি না। আইন করে যথাযথ প্রয়োগ না পেলে আইন করে লাভ কী হবে?'
তিনি বলেন, বিচার বিভাগকে শক্তিশালী করার জন্য ইনসাফ ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার জন্য বিচারক নিয়োগ বাড়ান। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে বিচারকার্য শেষ হলে সুশাসন নিশ্চিত হবে। আজকে দেশের সব থেকে বড় সংকট হচ্ছে সুশাসনের।
-পরে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক তার জবাবে বলেন, আমি দুঃখে কাঁদব নাকি হাসবো বুঝতে পারছি না। কারণ সংসদ সদস্য যে জ্ঞান দিলেন.. সেটা না হয় তার কাজে লাগবে। কিন্তু তার কতটুকু কাজে লেগেছে ঠিক জানি না। তার কারণ তিনি বললেন, মানুষ যেন বিচার পায়। পঁচাত্তরের ১৫ আগস্ট জাতির পিতাকে সপরিবারে হত্যার পরে বিচারের সুযোগ ছিলো? ছিলো না।
'বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার বন্ধে দায়মুক্তি আইনের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ওনারা ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ করে বিচার বন্ধ করেছিলেন। আর আজকে আমাকে বিচার শেখাচ্ছেন। উনারা হয়তো বলবেন ওটা করেছিলো খন্দকার মোশতাক। ১৯৭৫ সালের নভেম্বরের ৫ তারিখ থেকে উনারা (বিএনপি) ১৯৮১ সাল পযর্ন্ত ক্ষমতায় ছিলেন। ১৯৯১ ও ২০০১ সালে ক্ষমতায় ছিলেন। ইনডেমনিটি অর্ডিনেন্স তুলেছিলেন? তুলেননি। বিচার শেখান এখন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ক্ষমতায় আসার পর বঙ্গবন্ধু বিচার, জেল হত্যার বিচার এবং যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করেছেন। আইনের শাসন বলে এইভাবে বিচার করতে হয়। সেই জন্য আইন শাসন প্রতিষ্ঠা হয়েছে। সেই জন্য সাহস করে বিচারপতিদের সুযোগ সুবিধা বৃদ্ধির আইন আনা সম্ভভ হয়েছে।'
অবসরের পর প্রধান বিচারপতি মাসে ৭০ হাজার টাকা বিশেষ ভাতা পাবেন
অবসরের পর প্রধান বিচারপতির জন্য মাসে ৭০ হাজার টাকা বিশেষ ভাতার বিধান রেখে একটি আইনের খসড়া সংসদে উঠেছে।
মঙ্গলবার আইনমন্ত্রী আনিসুল হক ‘বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের বিচারক (ছুটি, পেনশন ও বিশেষাধিকার) বিল-২০২২’ সংসদে উত্থাপন করেন।
-পরে ৩০ দিনের মধ্যে বিলটি পরীক্ষা করে সংসদে প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটিতে পাঠানো হয়।
'১৯৮২ সালে সামরিক আসলে অধ্যাদেশ দিয়ে এ সংক্রান্ত আইন করা হয়। সেটি বাতিল করে বাংলায় নতুন আইন করতে বিলটি আনা হয়েছে। খসড়া আইনে বলা হয়েছে, অবসরের পর প্রধান বিচারপতি তার জীবদ্দশায় গৃহসহায়ক, গাড়িচালক, দারোয়ান সেবা, সাচিবিক সহায়তা এবং অফিস কাম বাসভবনের রক্ষণাবেক্ষণ সুবিধা পাবেন। এই ব্যয় নির্বাহের জন্য অবসরপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি প্রতি মাসে ৭০ হাজার বিশেষ ভাতা পাবেন।'
'সর্বশেষ ২০১৬ সালে বিচারকদের বেতন ও ভাতা বাড়ান হয়। বর্তমানে প্রধান বিচারপতি এক লাখ ১০ হাজার টাকা, আপিল বিভাগের বিচারক এক লাখ পাঁচ হাজার টাকা এবং হাই কোর্ট বিভাগের বিচারক ৯৫ হাজার বেতন পান। এছাড়া বেতনের ৫০ শতাংশ হারে বিশেষ ভাতা পান তারা।
-বিলে বলা হয়েছে, একজন বিচারককে তার মোট কর্মকালীন ছুটির শর্ত অনুযায়ী অর্ধ গড় বেতনে মোট ৩৬ মাসের অধিক ছুটি মঞ্জুর করা যাবে না। কোনো বিচারকের প্রকৃত কর্মকালের এক-চব্বিশাংশ ভাগ মেয়াদ পর্যন্ত তাকে পূর্ণ গড় বেতনে ছুটি মঞ্জুর করা যাবে।
'বিচারকদের সুবিধা বৃদ্ধিতে' সংসদে বিল উত্থাপন, আইনমন্ত্রীর সঙ্গে বিএনপির হারুনের বিতর্ক
পূর্ণ গড় বেতনে ছুটি এককালীন পাঁচ মাস এবং অন্যকোনো ছুটি এককালীন ১৬ মাসের অধিক মঞ্জুর করা যাবে না। কোনো বিচারক পূর্ণ গড় বেতনে ছুটিতে থাকাকালে তার নির্ধারিত মাসিক বেতনের সমান হারে ছুটিকালীন বেতন প্রাপ্য হবেন।
অবসরে যাওয়া বিচারকরা উৎসব ও বাংলা নববর্ষ ভাতা পাবেন বলে খসড়া আইনে বিধান রাখা হয়েছে।
খসড়া আইনে বলা হয়েছে, কোনো বিচারক অনুমোদিত ছুটি আ অবকাশের অতিরিক্ত অনুপস্থিতিকালের জন্য কোনো বেতন প্রাপ্য হবেন না। বিলে উচ্চ আদালতের বিচারকদের ছুটি, ছুটি নগদায়ন, আনুতোষিক ও পারিবারিক পেনশন, ভবিষ্য তহবিল ও পেনশন সংক্রান্ত বিভিন্ন বিধান সম্পর্কে বলা হয়েছে।